দুই বোনের ‘আত্মহত্যার’ নেপথ্যে ‘বিয়ে’


সিলেট নগরীর ৪নং ওয়ার্ডের আম্বরখানা মজুমদাররি এলাকায় ৩১নং বাসার ছাদ থেকে আপন দুই বোনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। স্বজনরা বলছেন, দুই বোন ‘আত্মহত্যা’ করেছেন। পুলিশ বলছে, এ নিয়ে তদন্ত চলছে।

নিহত দুই বোন হলেন, মজুমদাররির বাসার মৃত কলিমউল্লাহর মেয়ে রাণী বেগম (৩৮) ও ফাতেমা বেগম (২৭)

দুই বোন ঠিক কী কারণে ‘আত্মহত্যা’ করলেন তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। এটি ‘হত্যা’ কিনা, সে আলোচনাও আছে।

আম্বরখানা পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মফিজুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার সকালে খবর পেয়ে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে। ভবনের ছাদের উপর থাকা পিলারের রডের সাথে ঝুলন্ত ছিল তাদের মরদেহ।

মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘এই পরিবারের সদস্যদের কিছুটা অ্যাবনরমাল (অপ্রকৃতস্থ, অস্বাভাবিক) মনে হচ্ছে। তারা চাপা স্বভাবের। আত্মীয়স্বজনদের সাথেও তাদের তেমন যোগাযোগ নেই। ’

দুই বোনের ‘আত্মহত্যার’ বিষয়ে তাদের ভাই শেখ রাজন জানান, যে কারণে সমস্যা হয়েছে, একটা বিয়ের প্রস্তাব এসেছিল রবিবারে।

বরের বয়স একটু বেশি, পঞ্চাশ। লন্ডনী, দুই বাচ্চার বাবা। সে (রাণী) বিয়েতে রাজি নয়, ঘরে ঝগড়া করছিল। আমরা তাকে বলি, বিয়ের প্রস্তাব মাত্র এসেছে, বিয়ে তো আর হয়ে যায়নি। আস্তে আস্তে কনে দেখাব হলে হলো?না হলে নাই।

রাজন বলেন, ‘ সে ঝগড়া করে মায়ের সাথে। বোনের সাথেও ঝগড়া করে। কাল সোমবার ঝগড়া করে সে চাচার বাসায় (একই এলাকায়) চলে যায়। প্রায়ই ঝগড়া হলে এভাবে চাচার বাসায় চলে যায়, সেখানে থেকে আসে। আমরা ভেবেছি, চাচার বাসা থেকে সে সকালে আসবে। এইপর্যন্ত আমাদের শেষ। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ ভোর ৫টায় পাশের বাসা থেকে ডাকাডাকি করে বলে, আমাদের ছাদে মানুষ লটকে আছে। তখন আমরা দৌড়ে ছাদে যাই। গিয়ে দেখি দু'জনের ঝুলন্ত মরদেহ। আমি মরদেহ নিচে নামাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সবাই বলেন, পুলিশ আসুক। ’

এক প্রশ্নের জবাবে রাজন বলেন, ‘তারা রাগ করে এমন কাজ করেছে। আমার যে বড় বোন রাণী, তার খুব বেশি রাগ। তার মাথায় সমস্যা আছে। সে ভালো মানুষ এলেও ঝগড়া করে, আত্মীয়স্বজন এলে ঝগড়া করে। ডাক্তার বলেছে, তার মাথায় সমস্যা, তাকে নিয়ে কেউ কোথাও যেও না। ’

সে (রাণী) আমার আরেক বোনকে (ফাতেমা) নিয়ে মরার কথা বলেছিল। সে বলেছিল, মরবো যখন গা-ঘর জ্বালিয়ে মরবো। বিয়ের আলাপ আসায় তার হিংসে ঢুকেছে যে, আমি বিয়ে করব কেন। তার মাথা গরম হয়ে যায়। সে নিজে নিজে ফাঁসি লাগিয়ে আমার বোনকে নিয়ে মরেছে। ’

দুই বোনের ‘আত্মহত্যার’ বিষয়ে কথা হয় সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদীর সঙ্গে।

তিনি বলেন, “তাদের চাচাতো ভাই আমাকে যেটা বললেন যে, কাল রাতে নাকি দুই বোন দা নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে চাচার বাসায় যান। তখন তিনি জিজ্ঞেস করেন, তাদের সমস্যা কী হয়েছে? চলো, আমিও তোমাদের বাসায় যাবো। তখন ওই দুই বোন নাকি বলেছে, তুমি যেও না; গেলে তোমাকেও তারা মারবে। এই ‘তারা’ আসলে কারা? কে তাদেরকে মারতে চেয়েছিল?”

লোদী বলেন, ‘এই বাসায় কাল রাতে আসলে কী হয়েছিল, কেনইবা তারা আশ্রয়ের জন্য বেরিয়ে গিয়েছিল, তাদের হাতে দা কেন ছিল, এরপর আশপাশের লোকজন ভোরে তাদেরকে ঝুলন্ত অবস্থায় ছাদে দেখতে পায়...এ বিষয়টি আসলে আমি বলতে পারবো না, বলাটা সমীচীনও হবে না। ময়নাতদন্তের পরই জানা যাবে, আসলে কী হয়েছিল। তদন্তসাপেক্ষে আসলে বেরিয়ে আসবে, এই ঘটনার সাথে কারা জড়িত, কী কারণে ঘটনাটি ঘটেছে, কারাইবা তাদেরকে কাল রাতে বাসা থেকে বের হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, কেনইবা তাদের হাতে দা ছিল, তা পরিষ্কার হবে। ’

কাউন্সিলর লোদী বলেন, ‘পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য পরস্পরবিরোধী মনে হয়েছে। তারা তাদের বক্তব্যে একই জায়গায় থাকছেন না। তারা এই এলাকার আদি বাসিন্দা, কিন্তু এলাকায় তাদের সেরকম কোনো সামাজিক সম্পর্ক নেই। একধরনের আইসোলেটেড জীবনযাপন করে তারা। ঘটনাটি শুনে আমার কাছে সন্দেহজনক মনে হয়েছে। ’

রাণী বেগম নবম শ্রেণি অবধি এবং ফাতেমা বেগম মাস্টার্স পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন বলে জানা গেছে। তাদের পরিবারে পারিবারিক কলহ ‘লেগেই থাকতো’ বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

জানতে চাইলে নগরীর বিমানবন্দর থানার ওসি খান মোহাম্মদ মাইনুল জাকির বলেন, ঘটনাটি নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে এটি আত্মহত্যা কিনা, তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন